চলুন শুরুটা একটু গল্পের মাধ্যমেই করি। ধরুন, আপনি চিন্তা করলেন একটি ফাস্টফুড রেস্টুরেন্ট দিবেন। এর জন্য জায়গাও ঠিক করলেন। আপনার রেস্টুরেন্টিকে খুব সুন্দর ভাবে সাজালেন। আপনার রেস্টুরেন্টিকে সাজানোর প্রক্রিয়াটিকে On-page SEO/ On-site SEO ধরতে পারি। এখন আপনি চাচ্ছেন আপনার রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে সবাইকে অবগত করার মাধ্যেমে আয় শুরু করতে। এর জন্য আপনার রেস্টুরেন্টিকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে যেন সবাই জানতে পারে যে কত ভালো মানের খাবার প্রদান করা হয়। সুতরাং আপনার রেস্টুরেন্টিকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবার জন্য যা যা করা প্রয়োজন (রেস্টুরেন্ট এর বাইরে) সেটাকেই আমরা Off-page SEO ধরতে পারি।
অফ-পেজ এসইও কি?
একটি ওয়েব অথবা ব্লগ সাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেজের (SERPs) র্যাঙ্ক করার জন্য ওয়েবসাইটের বাইরে যেই কাজগুলো করা হয় তাকে অফ-পেইজ এসইও/ অফ-সাইট এসইও বলে। নিস রেলিভেন্ট হাই অথরিটি কিছু প্লাটফর্মে লিংক সাবমিট করা, ওয়েব অথবা ব্লগ সাইটের প্রচার করার মাধ্যমে অফপেইজ এসইও সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।
অফ-পেজ এসইও কেন গুরুত্বপূর্ণ?
প্রতিনিয়ত আপডেট এর ফলে সার্চ ইঞ্জিন এলগোরিদম র্যাঙ্কিং ফ্যাক্টরগুলো পরিবর্তিত হয়। তবে অফ-পেজের কাজগুলো খুব বেশি পরিবর্তন হবার সুযোগ নেই। অফ-পেজ এসইও একটি ওয়েব অথবা ব্লগ সাইটের র্যাঙ্কিং এর ক্ষেত্রে অনেকখানি ভূমিকা রাখে।
ব্যাকলিংক (Backlink)
ব্যাকলিংককে অফ-পেজ এসইও এর প্রাণ বলা হয়। একটি ওয়েব পেজের মান যাচাই করার জন্য সার্চ ইঞ্জিন ব্যাকলিংক চেক করে। সমমানের দুইটি ওয়েব পেজের মধ্যে কে কত অথরিটি সাইট থেকে এবং কত বেশি ব্যাকলিংক পেয়েছে, র্যাঙ্কিং এর জন্য সার্চ ইঞ্জিন তাকে অগ্রাধিকার দেয়।
সাধরনত লিংক দুই ধরণের হয়ে থাকে। যেমন-
1. Natural Links
যখন অন্য কোন ব্লগার বা ওয়েবসাইট Owner তাদের নিজের ওয়েবসাইটে আপনার ওয়েব পেজ/ আর্টিকেল এর লিংকটি ব্যাবহার করে, এই ধরনের লিংককে বলা হয় Natural Link. ওয়েবসাইটের মালিকরা এই কাজটি করেন, কারণ তারা মনে করে, আপনার আর্টিকেলটি তাদের ভিজিটরদের উপকারে আসবে।
2. Self-created Links
যখন আপনি অন্য কারও ওয়েবসাইটে গিয়ে লিংক তৈরি করার চেষ্টা করেন (যেমন ব্লগ কমেন্টিং, ডিরেক্টরি সাবমিশন, প্রোফাইল ক্রিয়েশন ইত্যাদি), ঐ ধরনের ব্যাকলিংক গুলো হলো Self-created Links.
অফ-পেজ এসইও এর গুরুত্বপূর্ণ উপায় সমূহ:
১. সোশ্যাল বুকমার্কিং (Social Bookmarking)
আপনার সাইটে খুব সহজে ব্যাকলিংক পাওয়ার জন্য জনপ্রিয় একটি মাধ্যম সোশ্যাল বুকমার্কিং। এক্ষেত্রে আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করে কাজ করতে হবে। কারণ এখন অনেক সোশ্যাল বুকমার্কিং সাইট রয়েছে, যেগুলো স্প্যামি। তাই আপনাকে মানসম্মত সোশ্যাল বুকমার্কিং সাইটগুলো খুঁজে বের করে কাজ করতে হবে। যেমন, Reddit, Digg, Delicious, StumbleUpon, Propeller, Flipboard ইত্যাদি।
২. প্রোফাইল লিংক বিল্ডিং (Profile Link Building)
ইন্টারনেট জগতে অসংখ্য সাইট রয়েছে যেখানে পাবলিক প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েসবসাইটের লিংক বসানোর সুযোগ রয়েছে। পাবলিক প্রোফাইলে ওয়েবসাইটের লিংক বসানোর এই পদ্ধতিটিই হচ্ছে প্রোফাইল লিংক বিল্ডিং।
প্রোফাইল লিংক বিল্ডিং (Profile Link Building) করার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে:–
- লিংক Clickable কিনা সেটা চেক করে দেখা।
- লগ আউট থাকা অবস্থায় Profile URL দেখা যায় কি না এবং লগ আউট অবস্থায় প্রোফাইল দেখে গেলেও Link Show করে কিনা তা দেখতে হবে।
- অনেক সময় ওয়েবসাইটের লিংক অ্যাড করার আলাদা অপশন না থাকলেও about me/bio অপশনে লিংক অ্যাড করা যায়। সেক্ষেত্রে anchor text কি দিচ্ছেন তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
৩. ডকুমেন্ট শেয়ারিং (Document Sharing)
অনলাইনে এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে যেখানে আপনার নিজের তৈরি ডকুমেন্ট যেমন পিডিএফ, পিপিটি এবং ভিডিও শেয়ার করতে দিবে। ডকুমেন্ট শেয়ার এর মাধ্যমে লিংক বিল্ডিং করার জন্য প্রথমে আপনার নিশ রিলেটেড কিছু ডকুমেন্ট তৈরী করতে হবে। এরপর ভালো মানের ডকুমেন্ট শেয়ারিং সাইট খুঁজে সেই সাইটে সাইনআপ করতে হবে। তারপর সাইন ইন করে আপনার ডকুমেন্ট শেয়ার করতে পারেন। ডকুমেন্ট আপলোড করার সময় ডেসক্রিপশনে সুন্দর করে আপনার সাইটের বর্ণনা দিতে হবে এবং তার মধ্যে সাইটের লিংক দেওয়ার মাধ্যমে লিংক বিল্ডিং করতে পারেন।
এক্ষেত্রে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, আংশিক বা সম্পূর্ণ কোনো ভাবেই অন্য কারো কন্টেন্ট কপি করে তা সাইটে পাবলিশ করা যাবে না।
সেরা কিছু ডকুমেন্ট শেয়ারিং সাইট এর লিংক-
dropbox.com
scribd.com
4shared.com
smashwords.com
yudu.com
authorstream.com
slideboom.com
box.com
slideserve.com
৪. গেস্ট পোস্টিং (Guest Posting)
নিজের লেখা একটি আর্টিকেল অন্য ব্যাক্তির ওয়েবসাইটে পাবলিশ করাই গেস্ট পোস্টিং। অনলাইনে এমন অনেক সাইট আছে যারা ভালো মানের লেখকদের লেখা তাদের নিজের সাইটে পাবলিশ করে থাকে।
কিভাবে Guest Blogger হওয়া যায়
আপনি যে ব্লগটি লিখবেন সেটা অবশ্যই আপনার নিশ রিলেটেড এবং ভালো মানের হতে হবে। ভালো মানের ব্লগ লেখার মাধ্যমে অন্য সব ব্লগারদের সাথে আপনার নিজস্ব পরিচিতির পরিধি বৃদ্ধি পাবে। যা আপনার ব্লগের ভিজিটরের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করবে।
গেস্ট পোস্টিং করার ফলে আপনি বিভিন্ন কমিউনিটিতে গিয়ে বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা প্রকাশ করার মাধ্যমে নতুন নতুন ব্যক্তিদের সাথে পরিচিত হতে পারবেন। যা আপনার সাইট এ ভিজিটর সংখ্যা বাড়াতে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।
গেস্ট পোস্টিং করার ক্ষেত্রে নিচের বিষয় গুলো মাথায় রাখতে হবে:
- যে ওয়েবসাইটে গেস্ট পোস্টিং করছেন তার সাথে আপনার সাইটের টপিক রিলেটেড কিনা।
- ব্যাকলিংক করার সময় অবশ্যই রেলিভেন্ট Anchor Text ব্যবহার করতে হবে।
- যে সব সাইটের Spam Score ৩-৫ এর বেশি সে সব সাইটে পোস্ট না করাই ভালো।
সেরা কিছু গেস্ট পোস্টিং সাইট এর লিংক-
mashable.com
techgadjets.wordpress.com
businessinsider.com
forbes.com
techcrunch.com
moz.com
entrepreneur.com
psychologytoday.com
৫. ডিরেক্টরি সাবমিশন (Directory Submission)
অনলাইনে এমন অনেক সাইট রয়েছে যেখানে বিভাগ ভিত্তিক ভাবে হাজার হাজার সাইটের ঠিকানা তাদের ডিরেক্টরিতে সাজিয়ে রাখে। এ ধরণের সাইট গুলোতে নিজের সাইটের ঠিকানা যুক্ত করাই হচ্ছে ডিরেক্টরি সাবমিশন।
এখন মানুষ কাঙ্খিত সাইট খুঁজে নিতে সার্চ ইঞ্জিন এর সার্চ বারে সার্চ করেন। কিন্তু সার্চ ইঞ্জিন এলগোরিদম এর আগে মানুষ তাদের কাঙ্খিত সাইট খুজার জন্য এই ডিরেক্টরি সাইটগুলো ব্যবহার করতো। পূর্বে ব্যাকলিংক এবং র্যাঙ্কিং এর ক্ষেত্রে ডিরেক্টরি সাবমিশন এর অনেক প্রভাব থাকলেও এখন তেমন নেই।
তবে আপনি যদি ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন ডিটেক্টরি সাইট থেকে লিংক নিতে পারেন তাহলে অবশ্যই একটা প্রভাব তো আপনার ওয়েবসাইটে পড়বেই।
৬. ফোরাম পোস্টিং (Forum Posting)
অফ-পেজ এসইও এর আরো একটি কৌশলের নাম হচ্ছে ফোরাম পোস্টিং। ফোরাম পোস্টিং যদিও বর্তমান সময়ে অফ-পেজ এসইও এর ক্ষেত্রে তেমন কোন প্রভাব ফেলে না। তবুও এক লিস্টে রাখার প্রধান কারণ- ফোরাম পোস্টিং এর মাধ্যমে আপনি আপনার সাইটের জনপ্রিয়তা আরো একধাপ এগিয়ে নিতে পারবেন।
ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন ফোরাম সাইট থেকে DoFollow ব্যাকলিংক নিতে হলে অবশ্যই আপনাকে ভালো মানের মেম্বার হতে হবে। আমরা অনেক সময়ই ফোরামের নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেই সেখান থেকে ভালো মানের ব্যাকলিংক আশা করি যার ফলে অবস্থা হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়।
৭. প্রশ্ন-উত্তর সাইটের লিংক – Quora (Q & A Link Building – Quora)
Quora বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় Question/Answer সাইট, এখানে বিশ্বের সব ধরনের টপিক এর উপর আলচনা এবং Question/Answer করা হয়। এছারা Quora তে অনেক Advance Features রয়েছে। এখানে পছন্দ মত অডিয়েন্স টার্গেট করে প্রশ্ন করা এবং পোস্ট এ কমেন্ট করার মাধ্যমে হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিংক তৈরি করা যায়। এখানে পোস্ট, কমেন্ট এবং প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মাধ্যমে মার্কেটিং করা যায়।
৮. ব্লগ কমেন্টিং (Comment Link)
আপনি আপনার সাইটের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল রেখে ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন আর্টিকেল বা কনটেন্ট এ কমেন্ট করার মাধ্যমে ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারেন। যদিও বর্তমানে অধিকাংশ ব্লগ এই NoFollow লিংক দিয়ে থাকে, তবুও আপনি এখান থেকে কিছু ভিজিটর পেতে পারেন।
৯. ওয়েব ২.০ (Web2.0)
Web2.0 ওয়েবসাইট বলতে সেই ওয়েবসাইট গুলো বুঝায় যেই সাইট গুলোতে সাব ডোমেইন তৈরি করে আপনি আপনার ওয়েবসাইট এর কনটেন্ট পাবলিশ এবং ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারেন সম্পূর্ণ ফ্রিতে। কন্টেন্ট এবং ব্যাকলিংক গুলো সম্পূর্ণ আপনার নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
কিছু জনপ্রিয় Web2.0 সাইটের লিস্ট-
tumblr.com
wordpress.com
blogger.com
weebly.com
yola.com
multiply.com
শেষ কথা
ব্যাকলিংক প্রকৃতপক্ষে সাইটের র্যাঙ্কিং উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে যদি একে সঠিকভাবে প্রয়োগ না করা হয় তবে তাতে উপকারের থেকে ক্ষতি বেশি হতে পারে।
নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রেখে ব্যাকলিংক তৈরি করতে হবে:
- সঠিক ভাবে এবং প্রাসঙ্গিক Anchor Text ব্যবহার করতে হবে।
- রেফার করা ডোমেইন এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে, একই সাইট থেকে বার বার লিংক নেওয়া যাবে না।
লেখাটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না, ধন্যবাদ।