একটি ওয়েবসাইট থেকে সর্বোচ্চ বেনিফিট পাওয়ার জন্য ওয়েবসাইট এর ভিতরে যে সমস্ত কাজ করা হয় তাকে অন-পেজ অপটিমাইজেশন বলে। আজ আমি অন-পেজ এসইও এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আশাকরি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

1. Website Structure

একটি ওয়েবসাইটের গঠন কেমন হওয়া উচিত, কেমন হলে গুগলের চোখে ভালো হবে এ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। নিচে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করছি, এগুলা নিয়ে কাজ করলে আশা করি ভাল ফলাফল পাবেন।

  • কথায় আছে প্রথমে দর্শনধারী তারপর গুণবিচারী। ওয়েবসাইটে সবসময়ই স্টান্ডার্ড কালার দেয়ার চেষ্টা করবেন যাতে করে ইউজাররা কখনো বিরক্ত না হয়।
  • ওয়েবসাইটটি যেন সকল ডিভাইসের জন্য রেস্পন্সিভ হয়।
  • আপনার ওয়েবসাইটের সার্ভিস ম্যাচিং একটি লোগো থাকতে হবে। লোগোর কালার এবং ওয়েবসাইটের কালারের কম্বিনেশন থাকা জরুরি।
  • ওয়েবসাইটে হলুদ কালার এভোয়েড করার চেষ্টা করবেন। কারণ গুগোল হলুদ কালার পছন্দ করেন না।

2. URL Structure

URL এর মধ্যে কীওয়ার্ড রাখা একটি র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর। তাই URL এমন ভাবে সাজাবেন যেন তার মধ্যে আপনার মেইন কীওয়ার্ডটি থাকে। ধরুন, আপনার মেইন কীওয়ার্ড “SEO Optimized Article” এবং “How to Write SEO Optimized Article” এই টপিকের উপর একটি আর্টিকেল লিখতে চাইছেন। তাহলে আপনার URL Structure কেমন হওয়া উচিত।

https://example.com/how-to-write-seo-optimized-article/

এখানে আমি মেইন কীওয়ার্ডটি URL এর শেষে দিয়েছি। এটা URL এর শুরুতে ব্যবহার করতে পারলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। কিন্তু একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে URL যেন মিনিংফুল হয়।

3. Meta Title

মেটা টাইটেল (Meta Title) সার্চ ইঞ্জিনের একটি র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর। আপনার ওয়েবসাইটের মেইন কীওয়ার্ড এবং কন্টেন্ট সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে মেটা টাইটেল এর গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। কোনো ব্যবহারকারী যখন সার্চ ইঞ্জিনের সার্চ বারে গিয়ে কোনো কিছু লিখে সার্চ করে তখন সার্চ রেজাল্ট পেজে URL, Meta Title এবং Meta Description দেখায়।

অধিকাংশ ব্যবহারকারী মেটা টাইটেল দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন সে আর্টিকেলটির ভিতরে যাবে কিনা। এই জন্য মেটা টাইটেল এসইও ফ্রেন্ডলি হওয়া খুব জরুরী। মেটা টাইটেল এসইও ফ্রেন্ডলি করার জন্য কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন: মেটা টাইটেল অবশ্যই ৫০-৬০ ক্যারেক্টার এর মধ্যে হতে হবে এবং ৫১৩ পিক্সেল এর বেশি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মেটা টাইটেল এর মধ্যে মেইন কীওয়ার্ড রাখতে হবে। মেটা টাইটেল যেন অবশ্যই মিনিংফুল এবং আইকেচি (Eye Catchy) হয়।

ধরুন, আপনার মেইন কীওয়ার্ড “SEO Optimized Article” তাহলে আপনার মেটা টাইটেল এমন হবে: How to Write SEO Optimized Article?

4. Meta Description

আপনার ওয়েবসাইটের কনটেন্ট সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে মেটা ডেসক্রিপশন এর গুরুত্ব মেটা টাইটেল এর থেকে কোনো অংশেই কম না। মেটা ডেসক্রিপশন অবশ্যই ১৫৫ ক্যারেক্টার এর মধ্যে হতে হবে এবং ৯২০ পিক্সেল এর বেশি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মেটা ডেসক্রিপশন এর শুরুতেই মেইন কীওয়ার্ড রাখাটা সব থেকে ভালো প্র্যাকটিস।

5. Article or Content

এসইও এক্সপার্টরা বলে থাকেন “Content Is The Key” অর্থাৎ একটি পেজের আর্টিকেলটাই আসল। আর্টিকেল ভালো মানের হলে খুব সহজেই একটি ওয়েব অথবা ব্লগ সাইটকে খুব সহজেই র‍্যাঙ্ক করানো যায়। আসুন তাহলে জেনে নেই কিভাবে একটি ভালো মানের আর্টিকেল লিখা যায়:

  • একটি আর্টিকেলে অবশ্যই একটি হেডলাইন এবং পাশাপাশি এক বা একাধিক সাব হেডলাইন রাখতে হবে।
  • হেডলাইনে অবশ্যই মেইন কীওয়ার্ডটি রাখার চেষ্টা করতে হবে। সম্ভব হলে সেটা শুরুর দিকে রাখা সবথেকে ভালো প্র্যাকটিস।
  • আর্টিকেল এর প্রথম প্যারাই মেইন কিওয়ার্ড রাখতে হবে।
  • আর্টিকেলটি অবশ্যই ইনফরমেটিভ বা তথ্য সম্বলিত হতে হবে।
  • গ্রামাটিক্যাল ইরর অর্থাৎ ব্যাকরণগত ভুল রাখা যাবে না।
  • সব সময় একটি আর্টিকেল ৩০০ ওয়ার্ড এর বেশি লেখার চেষ্টা করতে হবে।
  • দুই থেকে চার লাইনের প্যারা করে আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করতে হবে। যেন ইউজাররা পড়ার সময় বিরক্ত না হয়।
  • সাবহেডলাইন গুলোতে কীওয়ার্ড ব্যবহার করা ভালো প্র্যাকটিস। অন্তত এক/ দুইটিতে ব্যবহার করার চেষ্টা করা উচিত।

উপরের এসকল বিষয় মাথায় রেখে খুব সহজেই একটি ভাল মানের আর্টিকেল লেখা সম্ভব। কিন্তু একটি কথা মনে রাখবেন, আর্টিকেল এর মধ্যে ফোর্স করে বারবার মেইন কীওয়ার্ড ব্যবহার করা যাবে না। এতে আর্টিকেলের গুণগত মান নষ্ট হয় এবং গুগোল এটা পছন্দ করেন না।

Internal Linking হলো আপনার ওয়েবসাইটের একটি পেজের সাথে অন্য আরেকটি পেজের লিংক করা। সঠিকভাবে Internal Linking ওয়েবসাইটের রাঙ্কিং এ গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখে।

External Linking হলো আপনার ওয়েবসাইট থেকে অন্য একটি ওয়েবসাইটকে ব্যাকলিঙ্ক দেয়া। মাথায় রাখতে হবে, আপনি যে সকল সাইটকে লিংক দিচ্ছেন তারা যেন অবশ্যই হাই অথরিটি সাইট হয়। এবং অবশ্যই NoFollow লিংক দিবেন।

8. Image Optimization

একটি ওয়েব পেজকে র‍্যাঙ্ক করানোর ক্ষেত্রে ইমেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আসুন তাহলে দেখে নেই কিভাবে একটি ইমেজ এসইও অপটিমাইজড করবো এবং সেটা ব্যবহার করবো।

  • ইমেজ অবশ্যই আপনার আর্টিকেল রিলেটেড হতে হবে। ধরুন, আপনি বার্গার নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখলেন। সেই আর্টিকেল এ আপনাকে বার্গার রিলেটেড ইমেজ ব্যবহার করতে হবে।
  • ইমেজ rename করার সময় অবশ্যই নামের মধ্যে কীওয়ার্ড রাখতে হবে। আপনার কীওয়ার্ড যদি “SEO Expert” হয় তাহলে ইমেজ এর নাম হবে: “seo-expert-in-bangladesh”
  • ইমেজে alt tag ব্যবহার করতে হবে এবং alt tag এ কীওয়ার্ড রাখতে হবে।
  • ইমেজ এর গুনগত মান ঠিক রেখে যতটা সম্ভব ফাইল সাইজ কমিয়ে নিতে হবে। এতে ওয়েবসাইট এর লোডিং স্পিড ভালো থাকবে।
  • ইমেজ কোনো ওয়েবসাইট থেকে হুবহু কপি করা যাবে না, নিজে তৈরি করাটা সবথেকে ভালো প্র্যাকটিস।

9. Website Loading Speed

ওয়েবসাইট লোড হতে যদি অনেক বেশি সময় নেয় তাহলে উইজাররা বিরক্ত হয়ে আপনার ওয়েবসাইট থেকে বের হয়ে যাবে। এতে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর হারানোর পাশাপাশি বাউন্স রেট বেড়ে যাবে। ওয়েবসাইট এর বাউন্স রেট বেড়ে গেলে র‍্যাঙ্ক হারাতে পারে। তাই ওয়েবসাইট এর লোডিং স্পিড ঠিক রাখতে ভালো মানের কম্পানি থেকে হোস্টিং কিনতে হবে। হোস্টিং এর ভিতরে অহেতুক ভারী ফাইল রাখা যাবে না।

10. Social Share Button

সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটে ভিজিটর পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। অবশ্যই সোশ্যাল শেয়ার বাটন রাখতে হবে যাতে করে আপনার কোনো আর্টিকেল কারো ভালো লাগলে সে তার সোশ্যাল সাইটে শেয়ার করতে পারে।

11. Mandatory Page

ওয়েবসাইটে কিছু পেজ থাকা খুব জরুরি, যেমন: about, contact us, privacy policy ইত্যাদি।

উপরের বিষয় গুলো মাথায় রেখে যদি আপনার ওয়েব অথবা ব্লগ সাইট এর On-page Optimization করেন, আশাকরি ভালো ফলাফল পাবেন। অপি-পেজ এসইও কমপ্লিট হলে আপনার অনলাইন ব্যাবসার প্রচার এর জন্য অফ-পেজ এসইও (Off-page SEO) এর কাজ শুরু করে দিন।